বাউফলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের পাহাড়

বাউফলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের পাহাড়

এম অহিদুজ্জামান ডিউক, বাউফল:
পটুয়াখালী বাউফলের তৃতীয় শ্রেনীর এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী ওই কর্মচারী এখন বাউফল ইউনিয়ন ভূমি সহকারি হিসাবে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধীক অভিযোগ উঠলেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন।
জানাগেছে, আশরাফ আলী খান ১৯৯৪ তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন। তখন তার সর্বসাকুল্যে বেতন ছিল ৪ হাজার টাকা। চাকুরী করেন জেলার দশমিনা, মির্জাগঞ্চ, কালাইয়া, গলাচিপা কলাপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায়। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার নওমালা ইউপির বটকাজল গ্রামে। বাবা আবদুর রহমান একজন দরিদ্র কৃষকও মৎস্যজীবি। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। আর্থিক অনটনের মধ্যেই পরিবারের হাল ধরেন তিনি। চাকুরীতে যোগদানের ১ বছরের মধ্যেই অবৈধ ভাবে গড়া অর্থের ঝনঝনানি শুরু হয়। দরিদ্র পরিবারের থেকে উঠে আসা আশরাফ গড়ে তোলেন কোটি টাকা ব্যায়ে সুরম্য প্রাসাদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসা সহ নামে বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠান। চাকুরীর কিছুদিন পরেই একই এলাকার কাঞ্চন আলী মৃধার মেয়ে মোর্শেদাকে বিয়ে করেন। কৃষক কাঞ্চন আলী এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোন রকমে মেয়েকে বিয়ে দেন। বিয়ের পরে স্ত্রী মোর্শেদা বেগমও মালিক হন শত একর জমি ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। জেলা উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে একাধীক বাড়ি সহ নামে বেনামে ক্রয় করেছেন এসব সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অভিযোগ উঠে নানা ধরনের অনিয়মের, ভূমি উন্নয়ন কর, দাখিলা, মিউটিশন, কলম দিয়ে লিখে জাল পর্চা ও তদন্তদের নাম করে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে নিতে থাকেন উৎকোচ। আশরাফ আলী চাকুরীর কিছুদিনের মধ্যেই বাবার খুরকুটার ঘর ভেঙ্গে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে তৈরী করেন বসত বাড়ি। ১৯৯৬ সালে ক্রয় করেন প্রায় নামে বেনামে ৫০ লক্ষ টাকার চাষাবাদি জমি। স্বামীর ঘুষ দুনীতির সুবাদে স্ত্রী মোর্শেদা বেগমেরও ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়, তিনিও রাতারাতি কুটিপতি বনে যায়। যেমন হয়েছেনএকাধিক বাড়ির মালিক তেমনি প্রিয় স্ত্রীর নামে ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর স্টান্ডার্ড ব্যাংকে ১০লক্ষ টাকা এফডিআর করা হয়। যার হিসাব নং ০৯৯৪২৮। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড পটুয়াখালী সদর শাখায় ১০ লক্ষ টাকা এফডিআর রয়েছে। সম্প্রতি ছেলেকেও লন্ডনে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। ২০০৫ সালে জেলা শহর পটুয়াখালী সদরে ১৫ লক্ষ টাকায় তুষার ভিলা নামক একটি বাড়ী স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন। কিন্তু দলিল করার সময় প্রকৃত মূল্য গোপন রেখে ৮লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। আয়কর খোলার সময় সেখানে উল্লেখ করেছেন, শ্বশুর বাড়ীতে বসে স্ত্রী হাঁস মুরগি পালন করে অর্থ সংগ্রহ করে সেই টাকা দিয়ে ওই বাড়ীটি ক্রয় করেছেন। ২০০৬ সালে জেলা শহরের মৃধা ব্রিজ সংলগ্ন রিয়াজুল জান্নাত মসজিদ সংলগ্ন চার শতক জমি ২০লক্ষ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন। গ্রামের বাড়িতে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আসাদুজ্জামান তুষার নূরানী এবং হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মান করছেন। এখনও যার কাজ চলমান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু অংশ সরকারি খাস সম্পত্তি বলে উপজেলা সহকারি ভ’মি কমিশনারের অফিস সূত্রে জানাগেছে। প্রতিষ্ঠানটির কোন আয় না থাকলেও প্রতিমাসে ব্যয় করতে হয় ২০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে জেলার চৌরাস্তা এলাকায় ৪৫লক্ষ টাকার ৯ শতাংশ জমি করেন আশরাফ আলী খান। যাহার জেএলনং ৩৮, এসএ খতিয়ান নং ২১২৩, দাগ নম্বর ৭৯৬ ৮০৪। সম্প্রতি আউলিয়াপুর এলাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান কবির হোসেনের মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জমির বায়না চুক্তি করেন। তার বর্তমানে বেতন ২৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। এ বেতন দিয়ে কি ভাবে তিনি মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা পরিচালনা করছেন ? সম্প্রতি আবু জাফর নামে একজন অভিযোগ করেন, দিয়ারা জরিপ ৭২৪ ও ৭৬৫ নং দাগের নামজারি জমা খারিজ খতিয়ান নং ১৪৮৩ সঠিক নয় মর্মে তহশিলদার আশ্রাব আলী খান ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ২০ হাজার টাকা দিলে সেটি সঠিক হয়ে যায়। কালাইয়া ইউপির আবুবকর জানান, ৪৪ শতাংশ ধানি জমি  মিউটিশন করতে ১৪ হাজার টাকা নিলেও এখনও তার অফিস আমাকে মিউটিশন দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এরকম শত পরিবারের অভিযোগ রয়েছে নামজারি ও জমা খারিজ কেসের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিতেন এই ভূমি অফিসের সহকারী ভূমিকর্মকর্তা। আশরাফ আলী খান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রুহুল আমীন নামে এক লোক বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। যাহার স্মারক নং ১৬, তারিখ ১৯-০৭-২০২০। ইতিমধ্যে অভিযোগটি যাচাই বাছাই শেষে দুদক চেয়ারম্যান কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে যার স্মারক ৫১২৭ তারিখ ২৮-০৭-২০২০ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগে গেলে তিনি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটি এখনও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাননি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আশরাফ আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার এক স্বজনের সাথে আমার বিরোধ থাকায় মিডিয়ার কাছে তিনি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এখন কোন সমস্যা নেই; আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়েছে।
আশরাফ আলী খানের স্ত্রী মোর্শেদা জানান, আমার ভূসা মালের ব্যবসা ছিলো, কর্মচারী রেখে সেই দোকান পরিচালনা বরে টাকা জমিয়েছি ও স্বামীর দেয়া সংসার চালানোর টাকা ব্যাংকে জমিয়ে জমি ক্রয় করেছি।
বাউফল উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি আনিচুর রহমান বালি জানান, সরকারী সম্পত্তির কিছু অংশে মাদ্রাসা অবস্থিত। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্বল্প সময়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়া সহজ না; তবে দ্রæত জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হবে।